Go Back Go Back
Go Back Go Back
Go Back Go Back

তাহিয়ার সাফল্যঃ বন্ধু শিলার বিয়ে বন্ধ করে দুজনেই একসাথে স্কুলে যেতে পারছে

তাহিয়ার সাফল্যঃ বন্ধু শিলার বিয়ে বন্ধ করে দুজনেই একসাথে স্কুলে যেতে পারছে

News

তাহিয়ার সাফল্যঃ বন্ধু শিলার বিয়ে বন্ধ করে দুজনেই একসাথে স্কুলে যেতে পারছে

calendar_today 11 October 2021

তাহিয়ার সাফল্যঃ বন্ধু শিলার বিয়ে বন্ধ করে একসাথে স্কুল ও পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে দুজনেই

কোভিড-১৯ অতিমারির সময়ে অনেক মেয়েরই বিয়ে হয়ে গেল, কেড়ে নিল কত জীবনের স্বপ্ন!  

তাহিয়ার বন্ধু শিলা একজন মেধাবী ছাত্রী। সে ক্লাসে সবসময়ই প্রথম ১০ এর মধ্যে থাকত। দুজনের মধ্যে  গলায় গলায় ভাব। পড়াশুনায় একজন আরেকজনের সহযোগীতা নেয়। শিলারা এক ভাই এক বোন। বাবা পেশায় একজন দর্জী এবং মা গৃহিণী। কোভিড-১৯ অতিমারির সময়ে বাবার আয় রোজগার অনেক কমে যায়। সংসার আর শিলার পড়াশুনার খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে ওঠায় শিলার বাবা সিদ্ধান্ত নেয় শিলাকে বিয়ে দেবার । শিলাকে না জানিয়ে বিয়েও ঠিক করে ফেলে। ওর বাবা মা যখন এই ব্যাপারে আলাপ করছিল তখন সে এরকম সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে পারে । 

 

পরেরদিন স্কুলে গিয়ে শিলা কারো সাথে কথা বলতে চায়। শিলাকে একা একা ক্লাসের এক কোণায় বসে থাকতে দেখে তাহিয়া ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কীরে শিলা, কী হয়েছে তোর, এমন চুপ করে বসে আছিস কেন? তোর কী মন খারাপ, কিছু হয়েছে ??”
শিলা তাহিয়াকে সব খুলে বলে “আমি পড়াশুনা করে প্রতিষ্টিত হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, তা আর মনে হয় হবে না, কারণ আব্বা-মা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে”। 

তাহিয়া শিলার বিয়ের বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানালে প্রধান শিক্ষক ও আরও কয়েকজন শিক্ষক আর এলাকার কাউন্সেলরসহ শিলার বাড়িতে গিয়ে ওর বাবা মার সাথে কথা বলে। শিলার পড়াশুনার খরচ স্কুল বহন করবে বলে আশ্বস্থ করলে শিলার বিয়ে বন্ধ হয়।

 

 

তাহিয়া বলে “আমি ভীষণ আনন্দতি যে আমি একজন মেয়ের বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে পেরছি। আমি মনে করি আমরা সবাই যদি শিশু বিবাহ বন্ধ করতে একসাথে কাজ করি তবে সমাজে নানা অজুহাতে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে কমে যাবে। আর এজন্য আমাদের মেয়েদেরই বেশী কাজ করতে হবে।”

 

তাহিয়া (১৬) ইকবালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের, দশম শ্রেনীর একজন ছাত্রী। সে স্কুলের কিশোরী রিসোর্স সেন্টার এর সদস্য।  বাল্য বিবাহ আইনত দন্ডনীয়, এতে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়; ২০ বছরের আগে মা হওয়ার জন্য তার শরীর পূর্ণতা পায় না বলে অল্প বয়সে মা হলে তার মৃত্যুঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়, আর পড়াশুনা করতে না পারার কারনে একটি মেয়ের স্বপ্নগুলো ভেংগে যায় যা তাকে মানসিকভাবে তাকে অসুস্থ  করে তোলে; যৌতুকের কারনেও মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় এই বিষয়গুলো সে জেনারেশন ব্রেক থ্রু প্রকল্পের “জেমস” ক্লাশের মাধ্যমে জানে এবং মনে প্রাণে তা বিশ্বাস করে। তাহিয়া যা জানে তা অন্যদেরকেও জানায়।  তাকে এরকম কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি কারন তার বাবা মা শিক্ষিত এবং এই বিষয়ে সচেতন।

কিশোরী রিসোর্স সেন্টারের মেয়েরা তাদের এলাকায় অন্য মেয়েদের ও অভিভাবকদের সাথে বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে কথা বলে।

তাহিয়া বলে, “আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে তাহলে কোনও বাবা-মা কাউকে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে পারবে না । আমাদের সাথের এক বন্ধুর ক্লাস সেভেনে এ পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যায়, আর করোনাকালীন সময়ে তার একটি সন্তান হয়, এখন স্কুল খুললেও সে আর স্কুলে আসতে পারে না।" 

তাহিয়ার বন্ধুর মত অনেক মেয়ের স্বপ্নই এভাবে ভেঙ্গে যায় ও তারা ঝরে পরে। এদেরকে রক্ষা করতে হলে সমাজ থেকে বাল্য বিয়ে দূর করতে হবে।

আজ কন্যা শিশু দিবসে আমরা চাই একটি কন্যা শিশুরও যেন বিবাহ না হয়। তারা বেড়ে উঠুক, শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে সমাজ, সংসার ও দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করুক। মেয়েরা জ্ঞানে বিজ্ঞানে ইন্টারনেট ব্যাবহারে সর্বক্ষেত্রে দক্ষ হবে যেন তারা সমান তালে এগিয়ে যেতে পারে। এতে পরিবার সমাজ এবং দেশও উপকৃত হবে।

 

জেনারেশন ব্রেক থ্রুঃ জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে এবং বাংলাদেশে কিশোর-কিশোরী ও যুবকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ সেবার চাহিদা পূরণে একটি বহুমুখী প্রকল্প। উপযুক্ত ও কার্যকর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য, সচেতনতা, দক্ষতা এবং  কৈশোর-বান্ধব সেবা প্রদানের মাধ্যমে এই প্রকল্প জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা, অপ্রত্যাশিত ও অনিরাপদ গর্ভধারণসহ বিভিন্ন যৌনরোগ বিস্তার প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল কিশোর-কিশোরী ও যুবকদের (১০-১৯) বয়:সন্ধিকালীন প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার (A-SRHR) এবং জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা রোধ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, বয়:সন্ধিকাল বান্ধব সেবা প্রদানসহ ছেলেমেয়েদের মধ্যে জেন্ডার-সমতা ভিত্তিক আচরণ ও সম্মানবোধ তৈরি এবং কিশোর-কিশেরিীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি।    

© UNFPA Bangladesh /  Prince Naymuzzaman