জুনের মাঝামাঝি সময়ে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি বিপদসীমার নাগালের বাইরে চলে গেলে অল্প সময়ের মাঝেই মানুষ, গবাদিপশু, ঘরবাড়িসহ প্রয়োজনীয় সব কিছু পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করে। ক্ষতিগ্রস্থ হন প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। এ ধরনের দুর্যোগে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন গর্ভবতী নারীরা।
এ সময় ইউএনএফপি’র কর্মীগণ প্রায় ২০০ জন গর্ভবতী নারীকে উদ্ধার ও নিরাপদ প্রসবের জন্য নৌকা বা যানবাহন যোগে হাসপাতালে পৌঁছাতে সহায়তা করেন। আলো, বিদ্যুৎ, নেটওয়ার্কবিহীন পরিস্থিতিতে মিডওয়াইফদের মাধ্যমে প্রসব সহায়তা করা হয়েছে ৪৫ জন শিশুকে। যাদের মধ্যে ৭ জন নারী গর্ভকালীন জটিলতায় ভুগছিলেন।
ইউএনএফপিএ মিডওয়াইফ মোছা: সাদিয়া খাতুন বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো আলো, বিদ্যুৎ বা নেটওয়ার্ক ছিল না। প্রবল বন্যার মধ্যে দুপুর ২.৪৫ মিনিটে ২১ বছর বয়সী মিতা রানী নামের একজন সদ্য সন্তান প্রসবকারী মা আমাদের হাসপাতালে পৌঁছান। প্রসব ব্যথা উঠলে মিতার পরিবার তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করলেও স্রোতের কারণে তা হয়ে ওঠেনি। নৌকাতেই সন্তান প্রসব করেন মিতা। কিন্তু, সে পরিস্থিতিতে গর্ভফুলটি অপসারিত না হওয়ায় প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হতে থাকে তার।
এ অবস্থায় রোগীর আত্মীয়রা তাকে কাছের নগর মাতৃসদনে নিয়ে যান এবং প্রাথমিক সেবা নিশ্চিত করেন। কিন্তু সংকটাপন্ন অবস্থা বিবেচনায় মাতৃসদন থেকে দ্রুত সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। রোগীর রক্তক্ষরণ দেখে আমি ম্যানুয়ালি গর্ভফুলটি অপসারণ করি। কিছুক্ষণের মধ্যে রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় এবং তিনি সুস্থ বোধ করেন।’
এ রকম দুর্যোগে ব্যক্তিগত ও পরিবারিক শত প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও মানুষের পাশে দাঁড়ানো সাদিয়া খাতুনের মতো আমাদের সকল সাহসি সহকর্মীদের আমরা ইউএনএফপিএ পরিবার জানাই সশ্রদ্ধ অভিবাদন।